এই পোস্টটিতে আমরা জানব Indian History এর মধ্য যুগের Delhi Sultanate বা সুলতানি শাসন সম্পর্কে। আপনাদের সুবিধার উদ্দেশে এই পোস্টটি Bengali তে লেখা হল।
এখানে Delhi
Sultanate বা সুলতানি শাসন এর প্রথম ভাগ অর্থাৎ Delhi
Sultanate বা সুলতানি শাসনের সূচনা এবং এই যুগের প্রথম রাজত্বকারী বংশ, দাস বংশ
(Slave Dynasty) সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Delhi Sultanate
ভারতে সুলতানি শাসনের সূচনা
715 খ্রিস্টাব্দে আরবরা ভারতের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সিন্ধু দেশ জয় করে। এই সময় দাহের নামে ব্রাহ্মণ বংশের রাজা সেখানে রাজত্ব করতেন। 708 খ্রিস্টাব্দে সিংহলের রাজা, ইরাক
ও খোরাসনের আরব শাসনকর্তা অল্ হজ্জাক তার বিরুদ্ধে অভিযান পাঠান। দুটি অভিযানে ব্যর্থতার পর 712 খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম এর নেতৃত্বে আরবরা দাহির কে নিহত করে রাওয়ার এর যুদ্ধে জয় যুক্ত হয় এবং দেবল ও রাওয়ার সহ সমগ্র দেশ দখল করে।
এটিই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম আক্রমণ। এই অভিযান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় চাচনামা গ্রন্থটি থেকে। এই সিন্ধু জয়ের পর প্রায় 300 বছর পর্যন্ত এ মুসলিম (আরব)
শক্তি ভারতে কোন রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। ভারতে মুসলিম রাজত্ব স্থাপন শুরু করেন আফগানিস্তানের অন্তর্গত গজনী বংশের তুরকি সুলতানরা।
962 খ্রিস্টাব্দে আলপ্তগিন নামে জনৈক ভাগ্যান্বেষী আফগানিস্থানে গজনী রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর 977 খ্রিস্টাব্দে তার জামাতা সবুক্তগীন গজনী সিংহাসনে বসেন। তিনি সর্বপ্রথম ভারত আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। এরপর তার পুত্র সুলতান মামুদ এর রাজত্বকালে ভারতে প্রথম তুর্কি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক হেনরি এলিয়টের মতে 1000 খিষ্টাব্দে থেকে 1027 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি মোট 17 বার ভারত আক্রমণ করেন। গুজরাটের বিখ্যাত সোমনাথ মন্দির তিনি-ই লুণ্ঠন করেন 1026 খ্রিস্টাব্দে। ভারতে কোন স্থায়ী রাজ্য বিস্তার করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। সুলতান মাহমুদের অন্যতম সভাসদ ও বিশিষ্ট পণ্ডিত আল-বিরুনী মামুদের ভারত আক্রমণ কালে তার সঙ্গে ভারতে আসেন এবং একাদিক্রমে প্রায় 10 বছর ভারতে বসবাস করেন । তার প্রকৃত নাম ছিল আবু রিহান। আরবিও ভাষায় তিনি কিতাব-উল-হিন্দ এবং তহকিক-ই-হিন্দ নামে দুটি ভারত সম্পর্কিত গ্রন্থ লেখেন।
সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা
সুলতান মামুদ এর মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্যভুক্ত ঘুর রাজ্যের শাসনকর্তা গিয়াসউদ্দিন মহম্মদ ঘুর স্বাধীনতা ঘোষণা করে । 1173 খ্রিস্টাব্দে তিনি গজনী দখল করেন। তার মৃত্যুর পর তার ভ্রাতা ও সেনাপতি মহম্মদ ঘুরি রাজসিংহাসনে বসেন।
ভারতে মুসলিম বা তুরকি আধিপত্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহম্মদ ঘুরি। 1191 খ্রিস্টাব্দে চৌহান বংশীয় আজমির ও দিল্লির শাসক তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান
এর কাছে তরাইনের প্রথম
যুদ্ধে পরাজিত হন। 1192 খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে মহম্মদ ঘুরী তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান কে পরাজিত করে মুসলিম তথা সুলতানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন। এরপর তিনি ভারতের বিজিত রাজ্যগুলি শাসনভার কুতুবউদ্দিন আইবক এর ওপর অর্পন করে গজনীতে প্রত্যাবর্তন করেন।
Slave Dynasty
দাস বংশ(1206-1290)
- কুতুবউদ্দিন আইবক
1206 খ্রিস্টাব্দে নিঃসন্তান মুহাম্মদ ঘুরীর মৃত্যু হলে কুতুবউদ্দিন আইবক সুলতান উপাধি গ্রহণ করে নিজেকে ভারতের স্বাধীন নরপতি রূপে ঘোষণা করেন। এই সময় থেকে দিল্লিতে স্বাধীন সুলতানি শাসনের সূচনা হয়। আইবক কথার অর্থ দাস। তিনি তার প্রথম জীবনে মহম্মদ ঘুরী ক্রীতদাস ছিলেন পরে তিনি তার বিশ্বস্ত সেনাপ্রধানের পদ অর্জন করেন। কুতুবউদ্দিন আইবক এর প্রতিষ্ঠা রাজবংশকে দাস বংশ বলা হয়। ঘুরি তাকে মালিক ও সিপাহীসালার উপাধি
দান করেন।
দানশীলতা জন্য তিনি লক্ষ্দাতা নামেও পরিচিত। কুতুবুদ্দিন এর অন্যতম সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি বিহার ,পশ্চিমবঙ্গ
জয় করে পূর্ব ভারতে মুসলিম আধিপত্য বিস্তার করেন। খাজা কুতুবুদ্দিন বাখতিয়ার কাকি স্মৃতির উদ্দেশ্যে তিনি কুতুবমিনার নির্মাণ শুরু করেন। 1210 খ্রিস্টাব্দে পোলো খেলতে গিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। তার সমাধি রয়েছে লাহোরে।
- ইলতুৎমিস
কুতুবউদ্দিন এর মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র আলমসাহ্ সিংহাসনে বসে। কিন্তু তার অকর্মণ্যতার জন্য দিল্লি ওমরাও এবং আমিরগণের আমন্ত্রণে কুতুবউদ্দিন এর জামাতা ইলতুৎমিস 1211 খ্রিস্টাব্দে আরম শাহ্কে সিংহাসনচ্যুত করে সিংহাসনে বসেন ।
প্রথম জীবনে তিনি ক্রীতদাস ছিলেন। সিংহাসনে বসার পর তিনি তার রাজধানী শহর থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেন। 1217 খ্রিস্টাব্দে গজনী শাসক তাজউদ্দিনকে তিনি তরাইনের তৃতীয় যুদ্ধে পরাজিত করেন। 1229 খ্রিস্টাব্দে তিনি মুসলিম জগতে ধর্মগুরু বাগদাদের খলিফার থেকে সুলতান-ই-আজম উপাধি পান। খলিফার প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত নিজ মুদ্রার তিনি নিজেকে খলিফার সেনাপতি বলে অভিহিত করেন। তিনি কৌশলে দুর্ধর্ষ মোঙ্গল বীর চেঙ্গিস খাঁ কে ভারত ত্যাগে বাধ্য করেন। তার সময়কালেই চল্লিশ চক্র স্থাপন হয়। তিনি ইকতা ব্যবস্থা এবং টংকা ও জিতল নামক রুপা ও তামার মুদ্রা প্রচলন করেন। তাঁর সময়ে সুলতানি যুগে প্রথম রুপার মুদ্রা প্রচলন হয়।
কুতুবুদ্দিন আইবকের আরম্ভ করা কুতুব মিনারের নির্মাণকার্যকে তিনি শেষ করেন এবং কুতুবী মসজিদ স্থাপন করেন। 1236 খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়।
- সুলতান রাজিয়া
ইলতুৎমিসের কোন পুত্ররাই শাসনকার্যে উপযুক্ত ছিলেন না। তাই দিল্লির একদল ওমরাহের সমর্থন নিয়ে রাজিয়া সুলতান সিংহাসনে বসেন 1236 খ্রিস্টাব্দে।
রাজিয়া সুলতান একমাত্র নারী যিনি দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। তার আমল থেকে চল্লিশ চক্রের সঙ্গে রাজতন্ত্রের ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। তুর্কি অভিজাতবর্গই চল্লিশ চক্র নামে পরিচিত ছিল। সুলতান রাজিয়া তাদের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করলে তুর্কি অভিজাতবর্গ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিদ্রোহীদের নেতা আলতুনিয়া কাছে 1240 খ্রিস্টাব্দে তিনি পরাজিত ও বন্দি হন। পরবর্তীতে তিনি আলতুনিয়া সাথেই বিবাহ সম্পন্ন করেন এবং যুগ্মভাবে দিল্লির সুলতান হিসেবে ঘোষিত বাহরাম সাহ্ এর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। 1240 খ্রিস্টাব্দে এই যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও নিহত হন।
ইলতুৎমিস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সুলতানি বংশের শেষ শাসক ছিলেন নাসিরউদ্দিন মহম্মদ।
- গিয়াসউদ্দিন বলবন
নাসিরউদ্দিন এর মৃত্যুর পর তার শ্বশুর ও প্রধানমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন বলবন, উলুখ খাঁ উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। তিনি চল্লিশ চক্র নেতা ছিলেন।দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় তিনি উপলব্ধি করেন কেবলমাত্র চরম স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমেই প্রজাদের থেকে আনুগত্য আদায় ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব। এই কারণে তিনি নতুন রাজকীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন এবং চল্লিশ চক্র ক্ষমতাও উচ্ছেদ করেন। তিনি নতুনভাবে সৈন্যবাহিনী সংগঠন করেন এবং গুপ্তচর নিয়োগ করেন যা ছিল স্বৈরতন্ত্র এর প্রধান স্তম্ভ।
সমকালীন শ্রেষ্ঠ কবি আমির খসরু তার পৃষ্ঠপোষকতায় অর্জন করেন। তিনি ভারতের তোতাপাখি নামে পরিচিত ছিলেন। গিয়াসউদ্দিন বলবনের মৃত্যুর পর তার বংশের এবং একইসাথে দাস বংশের শেষ সুলতান ছিলেন কায়ুমার্স। কায়ুমার্সকে হত্যা করে জালাউদ্দ্দিন ফিরোজ খলজী 1290 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন।
1206 থেকে 1290 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে দাস বংশের শাসনকাল বলে অভিহিত করা হলেও এই সময়কালে একটি নয় দিল্লিতে তিনটি বংশ রাজত্ব করেছিল এবং এই তিনটি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবক, ইলতুৎমিস
ও গিয়াসউদ্দিন বলবন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন