গান্ধীজীর উত্থান
ব্রিটেন থেকে ওকালতি পড়ে এসে গান্ধীজী 1898 সালে সাউথ আফ্রিকাতে যান। সেখানে তিনি দাদা আব্দুল্লাহর কেসের জন্য গেলেও সেখানকার নিপীড়িত ভারতীয়দের দেখে তাদের সাহায্য করার জন্য 22 বছর সাউথ আফ্রিকা তে থাকেন। এরমধ্যে গান্ধীজীর প্রতিবাদের দুটি ধারা দেখা যায়।
- গান্ধীজীর প্রতিবাদের নরমপন্থী ভাগ (1894-1906)
দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে গান্ধীজী প্রথমে নরমপন্থী দের মত সরকারকে প্রেয়ার এবং পিটিশন দেওয়া শুরু করে এই আশায় যে যেহেতু আফ্রিকা ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ সেই হিসাবে সেখানকার বসবাসকারী ভারতীয়রা ব্রিটেনের নাগরিক এবং ব্রিটিশ সরকার তাদের দুর্দশা দেখলে তাদের সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
- প্যাসিভ রেজিস্টেন্স বা সত্যাগ্রহী ভাগ (1906-1914)
নরমপন্থী ভাবধারায় কাজ না হওয়ায় গান্ধীজি প্যাসিভ রেজিস্টেন্স এর দিকে চলে যায় যাকে তিনি সত্যাগ্রহ বলেন।
- তিনি প্রথম সত্যাগ্রহ করেন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ভারতীয়দের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে। এখানে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বলা হয়েছিল যে সমস্ত ভারতীয়রা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকে তাদেরকে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া একটি কার্ড নিয়ে ঘুরতে হবে এবং ব্রিটিশ আধিকারিকরা চাইলে তা দেখাতে হবে। কিন্তু অন্য কোন বর্গের মানুষের ক্ষেত্রে এরকম নিয়ম ছিল না যা দেখে গান্ধীজীর মনে হয় এটি অন্যায় এবং তিনি আন্দোলন শুরু করেন।
- দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়াতে ব্রিটিশ সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলে গান্ধীজী পুনরায় সত্যাগ্রহ শুরু করেন।
- এরপর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের অপর তিন পাউন্ড পোল ট্যাক্স বসায় এবং ঘোষণা করেন ক্রিশ্চান ধর্ম মতে বিবাহ ছাড়া বাকি যে কোন ধর্ম মতে বিবাহকে তারা মানবে না। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে ও গান্ধীজী সত্যাগ্রহ করেছিলেন।
তার সব কয়টি সত্যাগ্রহী দক্ষিণ আফ্রিকায় সফল হয় এবং সরকার তার প্রায় সমস্ত দাবি মেনে নেয় এরপরে গান্ধীজী ভারতে ফিরে আসেন 1915 সালের 9 জানুয়ারি। (এই দিনকে মনে রাখার জন্যই 2014 সাল থেকে 9 জানুয়ারিকে প্রবাসী ভারতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।)
দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতে গান্ধীজী ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন।
ভারতে গান্ধীজী
1915 সালে গান্ধীজী যখন ভারতে আসেন সেই সময়ে তিনি সকল ভারতীয় কাছে জনপ্রিয় ছিলেন তার দক্ষিণ আফ্রিকার সত্যাগ্রহের সফলতার জন্য এবং এই সময় ভারতবর্ষে হোমরুল আন্দোলন চলছিল। তিনি একজন সফল জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা হওয়া সত্ত্বেও ভারতে এসে হোমরুল আন্দোলনে যোগ দেন নি। তিন ট্রেনে করে ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন এবং ভারতের আসল অবস্থা দেখা শুরু করে।
- চম্পারন সত্যাগ্রহ 1917-
এই সময়ে গান্ধীজীর চম্পারন কৃষকদের দুর্দশা কথা জানতে পারেন যেখানে কৃষকরা তিন কাঠিয়া ব্যবস্থার শিকার ছিল। এটি একটি এমন ব্যবস্থা ছিল যে কোন কৃষকের কুড়ি কাঠা জমি থাকলে তাকে 3 কাঠা জমিতে বাধ্যতামূলকভাবে নীলচাষ করতেই হবে। নীল চাষে কৃষকদের মুনাফা না হওয়ায় কৃষকদের অবস্থা খুবই করুণ হয়ে পড়েছিল। তার ওপর নীল চাষ ছাড়তে চাইলে সরকার কৃষকদের থেকে অর্থ চাইতে থাকে। এমন অবস্থায় কৃষকদের স্বার্থ বাঁচানোর জন্য গান্ধীজীর ভারতে এসে চম্পারনে প্রথম সত্যাগ্রহ শুরু করেন 1917 সালে।
এবং তার এই সত্যাগ্রহ সফল হয় এবং সরকার ঘোষণা করে যে সমস্ত কৃষক অর্থ দিতে অসমর্থ তাদের থেকে টাকা নেওয়া হবে না কেবলমাত্র সেই সমস্ত কৃষকদের থেকে টাকা নেওয়া হবে যাদের সেই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আছে। রাজেন্দ্র প্রসাদ, জে বি কৃপ্লানি, মহাদেও দেশাই প্রমূখ গান্ধীজিকে চম্পারন সত্যাগ্রহের সময় সহায়তা করেন।
- আমেদাবাদ মিল স্ট্রাইক 1918-
এরপর গান্ধীজী আমেদাবাদের শ্রমিক অসন্তোষের কথা জানতে পারেন এবং সেখানে গিয়ে সত্যাগ্রহ করেন শ্রমিকদের স্বার্থ বাঁচানোর জন্য। আমেদাবাদে সেই সময় প্লেগের পাদুর ভাব হওয়ায় মিলের শ্রমিকরা মালিকদের কাছ থেকে তাদের বেতনের 50% টাকা চায় কিন্তু মিলের মালিকরা কুড়ি শতাংশ টাকা দিতে রাজি হয় এবং এতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। গান্ধীজীর মধ্যস্থতায় একটি ট্রিবুনাল তৈরির কথা বলা হয় এবং সেই ট্রিবুনাল এই ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিকে মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে কিছু সমস্যা হয়ে যাওয়ায় মালিকরা তাদের পূর্বের কথায় দৃঢ় হয়ে বসে এবং বলে কুড়ি শতাংশ থেকে বেশি তারা কোন টাকা দিতে পারবে না। এতেই গান্ধীজী আমরণ অনশনে বসেন এবং শেষে এই অবস্থার চাপে পড়ে সকল ট্রিবুনাল কথা মেনে নেয় এবং ট্রিবুনাল 35% টাকা দেওয়ার কথা বলে।
এইভাবে তার দ্বিতীয় সত্যাগ্রহ সফল হয়।
- খেরা সত্যাগ্রহ 1918-
সেরা গুজরাটের একটি জায়গা যেখানে 1918 সালে খরার কারণে ফসল না পাওয়ায় কৃষকরা কর দিতে পারছিল না। কিন্তু সরকার তাদের কর মাফ করছিলোনা গান্ধীজী এই অন্যায় দেখে সেখানে সত্যাগ্রহ শুরু করেন এবং তার এই সত্যাগ্রহ সফল হয় এবং কৃষকদের করব মাফ করে দেওয়া হয়।
- রাওলাট অ্যাক্ট 1919-
1919 সালে ব্রিটিশ সরকার একটি কুখ্যাত আইন নিয়ে আসে যাকে আমরা রাওলাট এক নামে জানি। এই আইন দ্বারা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যেকোনো ভারতবাসীকে ইংরেজরা গ্রেফতার করতে পারবে এবং তার বিনা বিচারে শাস্তি হতে পারবে।
এই আইন দেখে গোটা ভারতবর্ষের লোক বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে।
এবং এমনই এক বিরোধী সভায় 1919 সালের 13 এপ্রিল অমৃতসরের জালিওনাবাগে কিছু হাজার নিরস্ত্র মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। যেখানে জেনারেল ড্রায়ার উপস্থিত হয়ে জালিওনাবাগ এর একমাত্র দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিরস্ত্র মানুষদের উপর 40 রাউন্ড গুলি চালায় তাতে প্রায় 15 হাজার ভারতবাসী মারা যান।
এত হিংসা দেখে গান্ধীজী রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে আনা সত্যাগ্রহ কে প্রত্যাহার করে নেন।
এরকম একটি মর্মান্তিক ঘটনা দেখে ব্রিটিশ সরকার হান্টার কমিশন নামে একটি কমিশনকে ভারতে পাঠায় এই ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশন করার জন্য। হান্টার কমিশন 1919 সালের অক্টোবর মাসে ভারতে আসে এবং ইনভেস্টিগেশন করে তার রিপোর্ট উইনস্টন চার্চিল কে জমা দেয়। চার্চিল রিপোর্ট দেখে বলেন জেনারেল ডায়ার একজন ডেঞ্জারেস মানুষ আর তাকে তার পোস্টে থাকতে দেওয়া যেতে পারে না এরপরে জেনারেল ডায়ার কে ইংল্যান্ডে ডেকে নেওয়া হয় তার ওপর কোনো আইনি কারবাই করা হয় না বা কোন পেনাল্টি লাগানো হয় না। জেনারেল ডায়ার 1920 সালে ভারত ছেড়ে ইংল্যান্ডের চলে যান তার হাফ পেনশনের সাথে।
https://importantjobnotes.blogspot.com/2019/11/blog-post_12.html?m=1
উত্তরমুছুনGood
উত্তরমুছুনআরও গান্ধীজীর উত্থান
উত্তরমুছুন