1600 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্যবসা সূত্রে আসে এবং আসার সময় তারা ইংল্যান্ডের রানীর কাছ থেকে একটি রয়াল চারটা নিয়ে আসে যার দ্বারা তারা ভারতে একছত্র ব্যবসা করার অধিকার পায়। এরপর ধীরে ধীরে তারা ভারতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে থাকে এবং নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা শুরু করে। 1757 খ্রিস্টাব্দে তারা বাংলা সঙ্গে যুদ্ধ করে যেটাকে আমরা পলাশীর যুদ্ধ নামে জানি। এরপরে 1764 খ্রিস্টাব্দে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয় যার নাম ছিল বক্সারের যুদ্ধ যেখানটায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নবাব মীর কাসিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে একসঙ্গে হারিয়ে যায়। 1765 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। দেওয়ানী মানে টেক্স কালেক্ট করার ক্ষমতা। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা তিনটি রাজ্য ধনী হওয়ায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রচুর মুনাফা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কোম্পানির পলিসি ভালো না হওয়ায় এবং করাপশন এর কারণে কোম্পানির আধিকারিকরা প্রচুর ধনী হয়ে যায় কিন্তু কোম্পানি ক্ষতিতে চলতে থাকে যার ফলে ব্রিটিশ গভারমেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর লাগাম আনার চেষ্টা করে এবং কিছু আইন পাস করে।
- 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট
- রেগুলেটিং অ্যাক্টে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে একটি কোড অফ ডাইরেক্টর বাড়ানোর কথা বলা হয়, যে কোড অফ ডাইরেক্টর ব্রিটিশ গভারমেন্টকে তাদের সমস্ত খরচের হিসাব দিতে বাধ্য থাকবে।
- রেগুলেটিং অ্যাক্ট এই প্রথমবার কেন্দ্রীকরণ এর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর পূর্বে বাংলা মাদ্রাসও বোম্বে প্রেসিডেন্সির আলাদা আলাদা গভর্নর ছিল এবং তাদের আলাদা আলাদা লেজিসলেটিভ পাওয়ার ছিল অর্থাৎ তারা স্বাধীন ছিল। এই আইনের মাধ্যমে মাদ্রাজ বোম্বের গভর্নরের লেজিসলেটিভ ক্ষমতা কমিয়ে তাদের বাংলার অধীনে আনা শুরু হয় এবং বাংলার গভর্নরের লেজিসলেটিভ ক্ষমতা বাড়ানো হয়। বাংলার গভর্নর এর নাম পরিবর্তন করে গভর্নর জেনারেল অফ বেঙ্গল করা হয়। প্রথম গভর্নর জেনারেল অফ বেঙ্গল লর্ড হেস্টিং।
- গভর্নর জেনারেলের সাহায্য করার জন্য চারজনের একটি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল তৈরি করা হয়। এই এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের ও কাজ করতো।
- কলকাতায় 1774 সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
- কোম্পানি আধিকারিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসা বন্ধ করার কথা বলা হয়।
সেটেলমেন্ট অ্যাক্ট 1781- পূর্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদস্যদের উপর সুপ্রিম কোর্ট ও গভর্নর জেনারেলের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল উভয়েরই নিয়ন্ত্রণ ছিল। পরবর্তীকালে এতে সমস্যা দেখা দিলে সুপ্রিম কোর্টের কন্ট্রোলকে কমিয়ে দেওয়া হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর এবং এরপর থেকে গভর্নর জেনারেলের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে একেই সেটেলমেন্ট অ্যাক্ট 1781 বলা হয়।
- পিটস ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1784
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিদেশে যত জায়গায় কন্ট্রোল আছে সেটা ব্রিটিশ পজেশন এমনটা এই আইনে বলা হয়।
- এই আইনে ডুয়েল গভারমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়। যাতে বলা হয় কোর্ট অফ দিরেক্টরস কোম্পানির সমস্ত আর্থিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং পলিটিকাল মিলিটারি এডমিনিস্ট্রেটিভ বিষয়ক সিদ্ধান্ত বোর্ড অফ কন্ট্রোল নামক একটি নতুন বডি নেবে।
- চার্টার অ্যাক্ট 1833
- চার্টার অ্যাক্ট 1833 এ মাদ্রাজ এবং বোম্বে প্রেসিডেন্সির গভর্নরদের সমস্ত লেজিসলেটিভ ক্ষমতা নিয়ে বাংলার গভর্নর জেনারেলকে দিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে ভারতের গভর্নর জেনারেল বলে ঘোষণা করা হয়। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিং। এবং এইভাবে ভারতের কেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল।
- আগে যে সমস্ত নিয়ম আসতো সেগুলিকে 'রেগুলেশন' বলা হতো 1833 এরপর থেকে তাদেরকে আইন বলা শুরু হয়।
- 1833 সালের চার্টার অ্যাক্ট এ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাকে সকলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা বলা হয় কিন্তু কোড অফ ডাইরেক্টর এর চরম অসম্মতির জন্য সেটি আর হয়ে ওঠে না।
- চার্টার অ্যাক্ট 1853
- কভেনেনটেড (উচ্চপদস্থ সিভিল সার্ভিস) সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাকে সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
- এই অ্যাক্টের দ্বারা একটি সেপারেটেড লেজিসলেটিভ কাউন্সিল তৈরি করা হয় যার নাম ছিল ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল লেডিস লেডিস কাউন্সিল।
- গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1858
গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1858 কে গুড গভরমেন্ট অ্যাক্ট ও বলা হয়। গুড গভরমেন্ট মানে রেসপন্সিবল গভারমেন্ট অর্থাৎ যেই সরকারকে প্রশ্ন করা যায়। অর্থাৎ এর আগে ভারতে যতগুলি শাসন হয়েছে যেমন মোগলদের উদাহরণ দিয়ে দিলে, কোন সরকারি বডি বা সংস্থা গিয়ে শাহজাহান কে জিজ্ঞাসা করতে পারত না যে আপনি তাজমহল কেন বানাচ্ছে। কিন্তু ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী এখানে আমাদের বলেন যে তিনি আমাদের গুড গভরমেন্ট দিচ্ছেন যেখানে ভারতের শাসকরা ব্রিটেনর পার্লামেন্টের জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। সিস্টেমটা এরকম ছিল ভারতের সকল আধিকারিক ভাইসরয়কে রিপোর্ট করবে, ভাইসরয় সেক্রেটারি স্টেট ফর ইন্ডিয়া যিনি লন্ডনে থাকতেন তাকে জবাবদিহি করবে। সেক্রেটারি স্টেট ফর ইন্ডিয়া একজন ক্যাবিনেট মিনিস্টার ছিলেন আর যিনি ব্রিটেনের পার্লামেন্টকে জবাবদিহি করবে।
- গভর্নর জেনারেলের পদের পরিবর্তে ভাইসরয় পদ আনা হয়। ভাইসরয় ছিলেন ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞীর ডাইরেক্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ। লর্ড ক্যানিং ছিলেন ভারতের প্রথম ভাইসরয়।
- এই আইন ডুয়েল গভমেন্ট সিস্টেমকে সমাপ্ত করে বোর্ড অফ কন্ট্রোল আর কোড অফ দিরেক্টর কে সরিয়ে দিয়ে। তার বদলে একটি নতুন পোস্ট তৈরি হয় সেক্রেটারি স্টেট ফর ইন্ডিয়া।
- 15 জন সদস্যের একটি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া নামক বডি বানানো হয় যার কাজ ছিল সেক্রেটারি স্টেট ফর ইন্ডিয়া কে সাহায্য করা।
লর্ড ক্যানিং ভারতীয়দের কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াতে রিপ্রেজেন্টেশন দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করে এবং পরপর তিনটি আইনা আনা হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট 1861, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট 1892, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল 1909।
- ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট 1861
- এই আইনে প্রথমবার ভারতীয়দের 'ল মেকিং বডিতে' প্রবেশ করানো হয়। তবে ভারতীয়রা এখানকার non-official মেম্বার ছিলেন অর্থাৎ তাদের কাছে কোনো ক্ষমতা ছিল না (গিয়ে বসে থাকতো আর কি) আর এই সদস্যদের ভাইসরয় মনোনীত করতেন। বেনারসের রাজা, পাটিয়ালার মহারাজা এবং স্যার ডিংকার রাওকে 1862 সালে এক্সটেন্ডেড কাউন্সিলের সদস্য বানানো হয়।
- 1836 সালে সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কে কেন্দ্রীকরণ করা হয়েছিল। 1861 সালে লর্ড ক্যানিং সেই কেন্দ্রীকরণ থেকে বিকেন্দ্রীকরণের দিকে যাত্রা শুরু করেন এবং বিভিন্ন প্রভেন্সকে ক্ষমতা দেওয়া শুরু করেন। যার দরুন 1862 সালে বাংলায়, 1886 সালে নর্থ ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স এবং 1897 সালে পাঞ্জাবে লেজিসলেটিভ কাউন্সিল বানানো হয়।
- পোর্টফোলিও সিস্টেম চালু করা হয়।
- ইমারজেন্সি সময় লেজিসলেচারের পরামর্শ ছাড়া ভাইসরয় অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে আর যা ছয় মাসের জন্য থাকবে।
- ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট 1892
- লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে নন-অফিশিয়াল মেম্বারদের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
- ভারতীয় সদস্যদের প্রশ্ন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। তবে কারা সাপ্লিমেন্টারি প্রশ্ন করতে পারতেন না। সাপ্লিমেন্টারি প্রশ্ন অর্থাৎ একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর সেই উত্তর এর উপর প্রশ্ন করা হলে সেটিকে সাপ্লিমেন্টারি প্রশ্ন বলে।
- বলা হয় ভাইসরয় অফিশিয়াল মেম্বারদের মনোনীত করার জন্য প্রভিন্সিয়াল লেজিসলেচার এবং বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স ইত্যাদি বড় বড় বডি পরামর্শ নেবেন।
- এবং প্রভিন্সিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে যে সমস্ত সদস্যদের মনোনীত করা হবে তার জন্য জমিদার, ইউনিভার্সিটি এবং বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের থেকে পরামর্শ দেওয়া হবে।
- ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট 1909
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট 1909 মর্লে মিন্ট রিফর্মস নামেও পরিচিত।
- সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল এর সদস্য সংখ্যা 16 থেকে বাড়িয়ে 60 জন করা হয়।
- ভারতীয় সদস্যদের বাজেটে অংশ নেওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টারি প্রশ্ন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
- ভাইসরয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে প্রথমবার কোন ভারতীয়কে নিয়োগ করা হয় এবং তিনি ছিলেন সত্যন্দ্র প্রসাদ সিনহা।
- এই আইনে মুসলিমদের জন্য আলাদা করে ইলেকশনের কথা বলা হয় অর্থাৎ সেপারেট ইলেক্ট্রোরেট শুরু হয়ে যায়। এই কারণে লর্ড মিন্টো কে ফাদার অফ কমিউনাল ইলেক্ট্রোরেট বলা হয়।
{যখন কোন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র একটি দুর্বল রাষ্ট্রকে আইনগত ভাবে ও রাজনৈতিকভাবে কন্ট্রোল করে তখন সে দুর্বল দেশকে ওই শক্তিশালী রাষ্ট্রের কলোনি কান্ট্রি বলে।}
{যখন কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক স্বাধীনতা থাকে কিন্তু রাষ্ট্রের হেড হয় ইম্পেরিয়াল পাওয়ারের রাজা রানী তখন সেই রাষ্ট্র ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস পেয়েছে বলা হয়}
- গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1919
গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1919 মন্টেগু-চেমসফোর্ড রিফর্ম নামেও পরিচিত। গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া 1919 এ আমরা ভারতীয়রা প্রভিন্সিয়াল অটনমি চেয়েছিলাম কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বড় চালাকির সাথে এই প্রভিন্সিয়াল অটনমি বাস্তবিক ভাবে আমাদের দেয়নি এর বদলে দ্বৈত শাসন বা ডায়ারকি দিয়েছিল।
- এই আইনে প্রভেন্স গুলোর উপর কেন্দ্রের আধিপত্য কমানো হয় এবং কেন্দ্র ও প্রভেন্স গুলোর কাজ করার জায়গা আলাদা করে দেওয়া হয় সেন্ট্রাল ও প্রভিন্সিয়াল সাবজেক্ট গুলিকে ভাগ করে দিয়ে।
- প্রভিন্সিয়াল সাবজেক্ট গুলিকে আবারো দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। ট্রান্সফার সাবজেক্ট ও রিজার্ভ সাবজেক্ট হিসেবে। সমস্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সেন্ট্রাল সাবজেক্টে রাখা হয়েছিল। এছাড়া যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি ছিল সেগুলিকে প্রভিন্সিয়াল সাবজেক্টের রিজার্ভ সাবজেক্ট রাখা হয় আর যার উপর কন্ট্রোল ছিল গভর্নর ও তার এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের। যেই এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে ভারতীয় সদস্য সংখ্যা খুবই কম ছিল। আর বাকি যেই বিষয়গুলি থেকে যায় সেগুলি রিজার্ভ সাবজেক্টে রাখা হয়েছিল সেগুলিতে গভর্নর তার লেজিসলেটিভ কাউন্সিল কাজ করতো। এই লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে কিছু ভারতীয় সদস্য ছিল।
- এই আইনে প্রথমবার বাইক্যামেরালিস্ম ও ডাইরেক্ট ইলেকশন চালু করা হয়েছিল। তবে সেই সময় কেবলমাত্র ভারতের সেই সমস্ত লোকেরা ভোট দিতে পারতো যারা ট্যাক্স দিতে, যারা উচ্চশিক্ষিত ছিল।
- এই আইনে ভাইসরয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের 6 জন সদস্যের মধ্যে তিনজনকে ভারতীয় করে দেওয়ার কথা বলা হয়।
- কমিউনাল ইলেক্ট্ররেটকে বাড়ানো হয় এবং যা আগেই কেবল মুসলিমদের জন্য দেওয়া হয়েছিল এখন তা শিখ, অংলো ইন্ডিয়ান, ক্রিশ্চিয়ানো ও ইউরোপিয়ানদের জন্য করে দেওয়া হয়।
- এই আইনে লন্ডনে হাইকমিশনার ইন্ডিয়া নামক একটি পদের সূচনা করা হয় এবং সেক্রেটারি অফ স্টেটস ফর ইন্ডিয়ার কিছু কার্যভার সেই পদাধিকারীকে দেওয়া হয়।
- সেন্ট্রাল পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের কথা বলা হয় এই আইনে যা 1926 সালে তৈরি হয়েছিল।
- এই আইনে সেন্ট্রাল বাজেট এবং প্রভিন্সিয়াল বাজেটকে আলাদা করে দেওয়া হয়।
এই আইনে আরও বলা হয় এই আইনটি ভারতীয়দের জন্য কেমন তার বিচার করার জন্য 10 বছর পরে একটি স্যাচুটরি কমিশন ভারতে আসবে।
- সাইমন কমিশন- গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1919 এর কথা মত, এই আইন চালু হওয়ার 10 বছর পরে অর্থাৎ 1929 সালে ভারতে একটি স্যাচুটরি কমিশন আসার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয়রা গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1919 এ খুশি হয়নি এবং দেশে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিরোধিতা শুরু হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই বছর আগেই সাইমন কমিশন চলে আসে গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া 1919 এর রিভিউ করতে। সাইমন কমিশন 7 জনের একটি স্যাচুটরি কমিশন ছিল যার হেড ছিলেন স্যার জন সাইমন। কিন্তু এই কমিশনে কোন ভারতীয় না থাকায় ভারতীয়রা এই কমিশনকে মান্যতা দেয় না এবং সারা দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রবল বিক্ষোভের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও সাইমন কমিশন তার রিপোর্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জমা করে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া 1935 পাস হয়।
- 1932 সালে ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার রামসে ম্যাকডোনাল্ড কম্মুনাল আওয়ার্ড ঘোষণা করেন।
- গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া 1935
- এই আইনে একটি সর্বভারতীয় ফেডারেশন তৈরি করার কথা বলা হয়। এই আইনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয় সেন্ট্রাল ও প্রভিন্সের মধ্যে ফেডারেল লিস্ট, প্রভিন্সিয়াল লিস্ট ও কনকারেন্ট লিস্ট এর মাধ্যমে। ফেডারেল লিস্টে কেবলমাত্র কেন্দ্রের ক্ষমতা ছিল। প্রভিন্সিয়াল লিস্টে প্রভেন্স এর ক্ষমতা ছিল এবং কনকারেন্ট লিস্টে সেন্ট্রাল ও প্রভেন্স দুজনেরই ক্ষমতা ছিল।
- এই আইনে প্রভিন্স থেকে দ্বৈত শাসন কে সরিয়ে দিয়ে প্রভিন্সিয়াল অটনমি আনা হয়। এবং 1833 সালে বিকেন্দ্রীকরণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয় তা এখানে এসে সম্পন্ন হয়।
- দ্বৈত শাসনকে কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয় এবং সকল বিষয়কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় ট্রানস্ফার সাবজেক্ট ও রিজার্ভ সাবজেক্ট হিসেবে।
- বাংলা, বোম্বে, মাদ্রাজ, বিহার, আসাম ও ইউনাইটেড প্রভিন্সে বাই-কমিউনিজমকে ইন্ট্রোডিউস করা হয় এবং লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ও লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি তৈরি করা হয়।
- কম্মুনাল রিপ্রেজেন্টেশনকে আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস দের জন্য আলাদা করে ইলেকশনের ব্যবস্থা করা হয়।
- 1858 সালে তৈরি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া পদকে বন্দ করে দেওয়া হয়।
- আগে কেবলমাত্র জমিদার, উচ্চ শিক্ষিত সম্প্রদায় ভোট দিতে পারতো এই আইনে অন্যান্যদেরও ভোট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় অর্থাৎ টোটাল পপুলেশনের 10% লোকেদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
- রিজার্ভ ব্যাংক তৈরি কথা বলা হয়।
- ফেডারেল কোর্ট তৈরি করার কথা বলা হয় যা 1937 সালে তৈরি হয়।
- ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রভিন্সিয়াল পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন তৈরি কথা বলা হয়।
গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1935 এর পরবর্তীকালে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
- 1940 সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড লিথিংগ্লো ভারতকে না জানিয়েই এটা ঘোষণা করে দেয় যে ভারত ব্রিটেনের হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভাবে নেবে।
- এতে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতারা খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাদেরকে শান্ত করার জন্য এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের সহায়তা নেওয়ার জন্য তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড লিথিংগ্লো ভারতীয়দের সামনে একটি অফার দেন, যে তিনি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেবেন। যা আগস্ট অফার নামে পরিচিত।
- আর এই ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেওয়ার কথাটাকে আইনিভাবে মান্যতা দেওয়ার জন্য 1942 সালে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে।
- ক্রিপস মিশনের তিনজন সদস্য ছিলন স্যার স্ট্যামফোর্ড ক্লিপস, এ ভি আলেকজেন্ডার ও পেথিক লরেন্স। তারা ভারতে এসে বলেন, তারা ভারতকে যুদ্ধের পরে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দিয়ে দেবে যদি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগে এই প্রস্তাবে মেনে নেয়। কিন্তু মুসলিম লীগ এটা মানে না এবং পাকিস্তানের দাবি করে এর ফলে ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়।
- ক্রিপস মিশন এর ব্যর্থতার পর গান্ধীজি 1942 সালে আগস্ট মাসে ভারতছাড়ো আন্দোলনের সূচনা করেন। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় দিকে ভারতছাড়ো আন্দোলনের প্রভাবে পড়ে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখার জন্য এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়দের সাহায্য লাভের জন্য ক্যাবিনেট মিশনকে ভারতে পাঠায় 1946 সালে।
- ক্যাবিনেট মিশন ভারতে এসে বলে, তারা ভারতীয়দের ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস দেবে এবং কনস্টিটিউশন বানানোর জন্য একটি কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি তৈরি করবে কিন্তু যদি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ দুজনেই এটা মেনে নেয়। আবারও মুসলিম লীগ পাকিস্তানের দাবি জানাবে কিন্তু এবার কেবিনেট মিশন মুসলিম লীগকে কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি বানানোর জন্য যে ইলেকশন হবে সেটিতে ভাগ নেওয়ার জন্য রাজী করে দেয়। এই ইলেকশন ছিল একটি ইনডাইরেক্ট ইলেকশন যেখানে প্রতি 1 লক্ষ ভারতবাসী পিছু একজন প্রতিনিধি থাকবে বলে ঠিক করা হয়।
- এই হিসাবে 389 জন প্রতিনিধিদের নিয়ে সাংবিধানিক সভা গঠনের কথা বলা হয়। এরপর ইলেকশনের রেজাল্ট আসে যাতে দেখা যায় 296 টি নির্বাচিতদের মধ্যে 208 পদে কংগ্রেস জয়লাভ করে, 73 টি পদে মুসলিম লীগ জেতে এবং বাকি পদগুলি অন্যান্য দল না জেতে এবং বাকি 93 টি পদ নমিনেটেড পদ ছিল। যেগুলিতে প্রিন্সলিস্টেট থেকে প্রার্থীদের মনোনীত করা হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল
- এই ফলাফল দেখে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভাবেন তার পাকিস্তানের স্বপ্ন আর পূরণ হবে না এর জন্য 9 ডিসেম্বর 1946 সালে আয়োজিত সংবিধান সভার প্রথম বৈঠকে মুসলিম লীগ বয়কট করে এবং 211 জন সদস্য নিয়ে এই অধিবেশন শুরু হয়।
- সংবিধানিকসভার প্রথম অধিবেশনে ডক্টর সচ্ছিদানন্দ সিনহাকে এন্ট্রি প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। তার একদিন পরে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদকে সংবিধান সভার প্রেসিডেন্ট বানানো হয়।
- এই সংবিধানিক সভায় দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এইচ সি মুখার্জি ও ভি টি কৃষ্ণমাচারিয়া। ডক্টর বি আর আহমেদকরকে ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হয়।
- আসল সংবিধানে 395 টি আর্টিকেল ও 8 টি সিডিউল ছিল।
- 13/12/1946 এ জহরলাল নেহেরু এম এন্ড অবজেক্টিভ রেসোলিউশন পাস করেন যা পরবর্তীকালে প্রিয়েম্বেল বা প্রস্তাবনাতে পরিণত হয়।
- 22/1/1947 এ এই এমস এন্ড অবজেক্টিভ রেজোলিউশন সাংবিধানিক সভা গ্রহণ করে নেয়।
- 20/02/1947 সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি একটি ঘোষণা করেন যেখানে তিনি বলেন, 1948 সালের জুন মাসের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা দিয়ে ভারত ছেড়ে চলে যাবে। আর এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ক্লিমেন্ট এটলি ভারতে একজন নতুন ভাইসরয়কে পাঠান যার নাম ছিল লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
- মাউন্টব্যাটেন ভারতে এসে তার পরিকল্পনা সর্বসমক্ষে রাখেন 3 জুন 1947 সালে, যাকে আমরা 3 জুন প্লেন নামে জানি।
- লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সঙ্গে মিটিং করেন এবং এটা ঘোষণা করেন তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা দেবেন সঙ্গে ভারতের পার্টিশন করবেন অর্থাৎ তিনি পাকিস্তানের দাবি মেনে নেন।
- কিন্তু যেহেতু লর্ড মাউন্টব্যাটেন একজন এক্সিকিউটিভ ছিলেন তার কথাতেই এটা হওয়া সম্ভব ছিল না এটার ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে মান্যতা পাওয়া বাকি ছিল। এই কারণে 1947 সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয় যেটি ছিল ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স 1947।
- ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স 1947
- এই আইনে বলা হয় 15 ই আগস্ট 1947 সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসন শেষ হয়ে যাবে।
- ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা ডোমিনিয়ন স্টেট (পলিটি ভাষায় স্টেট মানে রাষ্ট্র) তৈরি হবে।
- ভাইসরয় পথকে উঠিয়ে দেওয়া হবে।
- ভাইসরয়ের পদটি বহাল থাকবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন পর্যন্ত না ভারত এবং পাকিস্তান রিপাবলিক হয়ে যায় অর্থাৎ তারা তাদের কনস্টিটিউশন বানিয়ে ফেলে। ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন থেকে যান।
- ভারত এবং পাকিস্তানের দুটি আলাদা সাংবিধানিক সভা হবে যারা নিজেদের ইচ্ছেমতো সংবিধান বানাতে পারবে।
- ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তৈরি কোন আইন ঐদিনের পর থেকে ভারত পাকিস্তানের উপরে থাকবে না যদিনা ভারত-পাকিস্তান সেটাকে রাখতে চায়।
- ব্রিটিশ প্যারামাউনসি ল্যাপস হয়ে যাবে। ব্রিটিশ প্যারামাউনসির দ্বারা ব্রিটিশ সরকার প্রিন্সলি স্টেট গুলির সার্বভৌমত্বকে আটকে রেখেছিল। এটি ল্যাপস হয়ে যাওয়ার ফলে প্রিন্সলি স্টেট গুলি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন হয়ে যায় এবং তাদেরকে অফার দেওয়া হয় তারা চাইলে ভারতে যোগ দিতে পারে চাইলে পাকিস্তানে যোগ দিতে পারে বা স্বাধীন থাকতে পারে।
- যতদিন পর্যন্ত না ভারত তার সংবিধান তৈরি করে নিচ্ছে ততদিন পর্যন্ত গভারমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট 1935 এর দ্বারা ভারতের শাসন কার্য চলবে।
- 26/11/1949 এ ভারতীয় সংবিধান তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তবে তার কিছু অংশকেই কার্যকর করা হয়, 26 শে জানুয়ারি দিনটিকে (এইদিন লাহোর অধিবেশনে পন্ডিত জহরলাল নেহেরু পূর্ণ স্বরাজের দাবি করেছিলেন) স্মরণীয় করে রাখার জন্য 26/01/1950 এ ভারতীয় সংবিধান কে সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন