সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের উদ্ভবের পূর্বে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ

ভারতে জাতীয়তাবাদ উন্মেষের কারণ-
  • পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশের ফলে ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান এবং সেখানে গিয়ে একটি স্বাধীন দেশের সমাজের সঙ্গে নিজের দেশের সমাজ ব্যবস্থার তুলনা করেন, যেখানে জনসাধারণকে বেসিক হিউম্যান রাইট পর্যন্ত দেওয়া হতো না।
  • পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশের ফলে ভারতীয়রা বহির্বিশ্বের সমস্ত বিপ্লব সম্পর্কে এবং নবজাগরণের সম্পর্কে জানতে পারে, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদ উন্মেষে অনুপ্রেরণা যোগায়, যেমন- সাউথ আফ্রিকা, গ্রিস এবং বিশেষভাবে আয়ারল্যান্ডের বিপ্লব ভারতীয়দের অনুপ্রাণিত করে।
  • ইংরেজি ভাষা শেখার ফলে ভারতের এক প্রান্তের মানুষ অন্য প্রান্তের মানুষের সঙ্গে সহজে কথোপকথন করতে পারে আর যারা রাজনৈতিক মতবাদ প্রবর্তনে সহায়ক হয়।
  • এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে 169 টি দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র ছিল যেগুলি সরকারের সমালোচনা করত এবং ভারতীয়দের এক হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাতে।
  • এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতে যে দেশাত্মবোধে অনুপ্রেরিত সাহিত্যের উদ্ভব হয় তা জাতীয়তাবাদী মনোভাব গঠনে সহায়তা করে।
  • ব্রিটিশদের বর্ণ বৈষম্যতা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উদ্ভবে একটি অন্যতম কারণ ছিল। 
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠন হওয়ার আগে ভারতে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠনগুলি ছিল-

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উদ্ভবের আগে ভারতে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠনগুলি ছিল তাঁরা সকলেই প্রায় একই রকম দাবি করত যে গুলি হল-
  • ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি
  • অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস
  • শিক্ষার বিকাশ
এই সংগঠন গুলির বেশিরভাগই কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সর্বভারতীয় কোন সংগঠন গড়ে ওঠেনি।

জাতীয় কংগ্রেস তৈরীর আগে বাংলার রাজনৈতিক সংগঠন

  1. The Bongabhasha prakashika Sabha - রাজা রামমোহন রায় 1836 সালে গঠন করে।
  2. The zamindari association- 
  3. The Bengal British India society- 1843 সালে গঠিত হয়। 1851 সালে The zamindari association বা landholder's society ও The Bengal British India society মিলে  British Indian association সংগঠিত হয়। British Indian association ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কয়েকটি দাবি রাখে যে গুলি হল- 
    1. জনপ্রিয় লোকেদের নিয়ে একটি লেজিসলেচার গঠন করা।
    2. জুডিশিয়ারিকে এক্সিকিউটিভ থেকে আলাদা করা।
    3. উচ্চপদস্থ আমলা বেতন কমান।
    4. লবণ, আপগারি ও স্ট্যাম্পের উপর ডিউটি বন্ধ করা।                

      1853 খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট এর প্রস্তাবগুলি কিছু কিছু মানা হয় যেমন ছয়জন সদস্যের একটি লেজিসলেটিভ কাউন্সিল বানানোর কথা 1853 সালের চার্টার অ্যাক্ট এ বলা হয়েছিলো।
  4. The Indian League- শিশির কুমার ঘোষ 1875 খ্রিস্টাব্দের এটি গঠন করেন।
  5. The Indian association of Calcutta- এটি Indian national association নামে ও পরিচিত। এই সংস্থাটি 1876 খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উদ্ভবের আগে ভারতের রাজনৈতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে এটি ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। Indian national association ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স বাড়ানোর দাবি রাখে সরকারের কাছে। এই সংস্থাটি কলকাতা এবং কলকাতা ছাড়াও কলকাতার বাইরে কিছু শাখা ছিল। Indian national association এর মেম্বারশিপ ফি কম রাখা হয়েছিল যাতে সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক সংগঠনে প্রবেশ করতে পারে। Indian national association সর্বপ্রথম 1883 সালের ডিসেম্বর মাসে 28-30 পর্যন্ত একটি সর্বভারতীয় সভার আয়োজন করে। পরবর্তীকালে 1886 সালে Indian national association ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।
জাতীয় কংগ্রেস তৈরীর আগে বোম্বের রাজনৈতিক সংগঠন
  1. The poona sarvajanik Sabha - 1867 খ্রিস্টাব্দে মহাদেব গোবিন্দ রানাডে পুনা সার্বজনীক সভা গঠন করেন ।
  2. The Bombay presidency association - 1885 খ্রিস্টাব্দে বদ্রুদ্দিন ত্যাবজি, ফিরোজশাহ মেহেতা এবং কে টি টেলাঙ্গ এই সংগঠনটি তৈরি করেন।
জাতীয় কংগ্রেস তৈরীর আগে মাদ্রাজ রাজনৈতিক সংগঠন
  1. The Madras Mahajan Sabha - 1884 খ্রিস্টাব্দে এম ভিরাঘবচারি, বি সুব্রামানিয়াম আইয়ার ও পি আনন্দ চার্লু মিলে এই সংগঠন কে গঠন করেন।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পূর্বের আন্দোলন-

এই সমস্ত সংস্থাগুলি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উত্থান এর আগে অনেকগুলি আন্দোলন করেছিল-
  1. 1875 সালে কটন আমদানির ওপর টেক্স নিয়ে।
  2. 1878-1879 সরকারের কাজে ভারতীয়দের নিয়োগ নিয়ে।
  3. লর্ড লিটনের আফগান অভিযান নিয়ে।
  4. 1878 সালের অস্ত্র আইন নিয়ে।
  5. 1878 সালের দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন নিয়ে।
  6. ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট নিয়ে।
  7. ইলবার্ট বিল নিয়ে।
  8. সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বয়স বাড়ানো নিয়ে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Fundamental right in Bengali | মৌলিক অধিকার

Fundamental right বা মৌলিক অধিকার ভারতীয় সংবিধানের part 3 এর article 12 থেকে article 35 এর মধ্যে আছে। মৌলিক অধিকারের ধারণা US Constitution থেকে নেওয়া হয়েছে।  ভারতীয় সংবিধানে বর্তমানে ছয়টি মৌলিক অধিকার আছে। যে গুলি হল, Right to Equality বা সাম্যের অধিকার (article 14 থেকে 18) Right to freedom বাক স্বাধীনতার অধিকার (article 19 থেকে 22) Right against exploitation বা শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (article 23 থেকে 24) Right to freedom of religion বা ধর্মীয় স্বাধীনতা (article 25 থেকে 28) Cultural and educational rights বা শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার (article 29 থেকে 30) Right to constitutional remedies বা সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার (article 32) 1978 খ্রিস্টাব্দের আগে right to property বা সম্পত্তির অধিকার ও একটি fundamental right বা মৌলিক অধিকার ছিল কিন্তু 1978 সালে 44 তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে সরিয়ে legal right বানানো হয় যা বর্তমানে article 300A যে আছে। Right to Equality বা সাম্যের অধিকার (article 14 থেকে 18) -  Article 14 -  Equal

ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজীর উত্থান

গান্ধীজীর উত্থান ব্রিটেন থেকে ওকালতি পড়ে এসে গান্ধীজী 1898 সালে সাউথ আফ্রিকাতে যান। সেখানে তিনি দাদা আব্দুল্লাহর কেসের জন্য গেলেও সেখানকার নিপীড়িত ভারতীয়দের দেখে তাদের সাহায্য করার জন্য 22 বছর সাউথ আফ্রিকা তে থাকেন। এরমধ্যে গান্ধীজীর প্রতিবাদের দুটি ধারা দেখা যায়। গান্ধীজীর প্রতিবাদের নরমপন্থী ভাগ (1894-1906) দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে গান্ধীজী প্রথমে নরমপন্থী দের মত সরকারকে প্রেয়ার এবং পিটিশন দেওয়া শুরু করে এই আশায় যে যেহেতু আফ্রিকা ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ সেই হিসাবে সেখানকার বসবাসকারী ভারতীয়রা ব্রিটেনের নাগরিক এবং ব্রিটিশ সরকার তাদের দুর্দশা দেখলে তাদের সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।  প্যাসিভ রেজিস্টেন্স বা সত্যাগ্রহী ভাগ (1906-1914) নরমপন্থী ভাবধারায় কাজ না হওয়ায় গান্ধীজি প্যাসিভ রেজিস্টেন্স এর দিকে চলে যায় যাকে তিনি সত্যাগ্রহ বলেন। তিনি প্রথম সত্যাগ্রহ করেন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ভারতীয়দের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে। এখানে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বলা হয়েছিল যে সমস্ত ভারতীয়রা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকে তাদেরকে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া একটি কার্ড নিয়ে ঘুরতে হব

ধ্বনি

ধ্বনি কাকে বলে? বাক যন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়োগে শব্দের বিশ্লিষ্ট তম অংশকে বলে ধ্বনি। বাংলা ব্যাকরণে 11 টি স্বরধ্বনি এবং 39 টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে। ধ্বনি পরিবর্তন দুইভবে হয়, স্বরধ্বনি ঘটিত পরিবর্তন ও ব্যঞ্জনধ্বনি ঘটিত পরিবর্তন। স্বরধ্বনিঘটিত পরিবর্তন- স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ-  উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা ছন্দের প্রয়োজনে সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ্ণকে  ভেঙে তার মধ্যে স্বরধ্বনি আনার রীতিকে বলা হয় স্বরভক্তি বাা বিপ্রকর্ষ। যেমন - রত্ন > রতন স্বরাগম- উচ্চারণ কে সহজ করতে অথবা উচ্চারণের অপারগতার জন্য শব্দের শুরুতে, মধ্যে বা শেষে স্বরধ্বনি আগমনকে বলা হয় স্বরাগম। স্বরাগমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। আদি স্বরাগম- শব্দের শুরুতে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন- স্কুল > ইস্কুল মধ্য স্বরাগম-  শব্দের মধ্যে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন- রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম ইত্যাদি। অন্ত স্বরাগম-  শব্দের শেষে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন- বেঞ্চ >বেঞ্চি, ইঞ্চ>ইঞ্চি ইত্যাদি। স্বরলোপ-  উচ্চারণের কোন ত্রুটি বা সুবিধার জন্য শব্দের অন্তর্গত কোন