গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারতে পুষ্যভূতি বংশের উত্থান হয়। পুষ্যভূতি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন থানেশ্বর, যিনি গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীন একজন সামন্ত ছিলেন। হুন আক্রমণ এর পরে তিনি নিজেকে স্বতন্ত্র বলে ঘোষিত করেন এবং পুষ্যভূতি বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
পুষ্যভূতি বংশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শাসক ছিলেন প্রভাকরবর্ধন যার শাসনকাল ছিল 580 খ্রিস্টাব্দ থেকে 605 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
প্রভাকরবর্ধন বর্ধন এর পরে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজ্যবর্ধন সিংহাসনে বসেন। রাজ্যবর্ধনের সিংহাসনে বসার পর থেকেই তাকে অনেকগুলি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। রাজ্যবর্ধনের জামাতা গ্রহবর্মন যে রাজ্যবর্ধনেরর বোন রাজশ্রী কে বিবাহ করেন, তার ওপর মৌখরি রাজ দেবগুপ্ত আক্রমণ করেন এবং এই যুদ্ধে গ্রহবর্মন এর মৃত্যু হয়। জামাতর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যর রাজ্যবর্ধন দেবগুপ্ত উপর আক্রমণ করেন এবং তাকে হত্যা করেন। এই দেখে দেব গুপ্তর মিত্র শশাঙ্ক রাজ্যবর্ধনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং এই যুদ্ধে রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুু হয় এবংং রাজশ্রী জঙ্গলে গিয়ে আত্মরক্ষাা করে।
রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসেন।
হর্ষবর্ধন
হর্ষবর্ধন 606 খ্রীষ্টাব্দ সিংহাসনে বসেন এবং তখন থেকেই Harsha Era শুরু হয়।
সিংহাসনে বসার পর হর্ষবর্ধন সবার প্রথম তার বোন রাজশ্রী কে উদ্ধার করে এবং শশাঙ্ক কে কনৌজ থেকে বিতাড়িত করেন এবং থানেশ্বর অধিকার করেন। এরপর তিনি কনৌজ কে তার রাজধানী বানান। এরপর হর্ষবর্ধন তাই ভাই ও জামাতা মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শশাঙ্কের বিরুদ্ধে পূর্বের অভিযান চালান তবে এই অভিযানে প্রথমবার তিনি সফল হননি। দ্বিতীয় বার অভিযান চালানোর সময় শশাঙ্কের মৃত্যু হয়ে যায় এবং এর পরে হর্ষবর্ধন শশাঙ্কের রাজধানী ও শশাঙ্কের পুরো রাজ্য দখল করেন।
এরপর হর্ষবর্ধন মৈত্রকের রাজা দ্বিতীয় ধ্রুব সেনকে পরাজিত করেন কিন্তু তিনি তাকে পুষ্যভূতি বংশের একজন সামন্ত রাজা বানিয়ে তাকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দেন এবং তিনি দ্বিতীয় ধ্রুব সেনের সঙ্গে তার বোনের বিবাহ দেন।
এরপর তিনি দাক্ষিণাত্যের দিকে নিজের নজর দেন কিন্তু দাক্ষিণাত্যের চালুক্য বংশের রাজা দ্বিতীয় পুলকেশী থাকার কারণে তার দাক্ষিণাত্য জয় করার স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি। দ্বিতীয় পুলকেশী সঙ্গে লড়াইয়ে হার তার দিগ্বিজয়ী অভিযানের একমাত্র হার ছিল।
হর্ষবর্ধন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতেন তিনি চীনে একজন দূতকে পাঠিয়েছিলেন এবং তার সময় এই বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভারতে আসেন। হিউয়েন সাং এর বিবরণ অনুযায়ী, হর্ষবর্ধন মহা প্রয়োগে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর ধার্মিক অনুষ্ঠান উদযাপন করতেন, বলা হয়ে থাকে পরবর্তীকালে এই ধার্মিক অনুষ্ঠানেই কুম্ভমেলায় রূপান্তরিত হয়। হিউয়েন সাং এর বিবরণ থেকে আমরা আরো অনেক বিষয় জানতে পারি হর্ষবর্ধন সম্পর্কে যেমন তিনি শিব ভক্ত ছিলেন সাথে সাথে তিনি পরধর্ম সহিষ্ণুতা তার রাজস্বের একটি বড় অংশ যা প্রায় 100 টি গ্রামের রাজস্বের সমান তা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচার জন্য দেওয়া হতো যেখানে বেশি ভাগই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা থাকতেন। হিউয়েন সাং ভারতের এসে সু-ইউ-কি নামক গ্রন্থটি রচনা করেন।
হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন বানভট্ট যিনি হর্ষচরিত গ্রন্থটি রচনা করেন। হর্ষবর্ধন নিজেও একজন লেখক ছিলেন যিনি নাগনন্দ, রত্নাবলী ও প্রিয়দর্শী কার মতো নাটক রচনা করেছেন।
674 খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যু হয় এবং তার কোন উত্তরাধিকার না থাকায় তার মন্ত্রী অরুনাসভা তার স্থান দখল করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন