সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধ্বনি

ধ্বনি কাকে বলে?
বাক যন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়োগে শব্দের বিশ্লিষ্ট তম অংশকে বলে ধ্বনি।
বাংলা ব্যাকরণে 11 টি স্বরধ্বনি এবং 39 টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে।
ধ্বনি পরিবর্তন দুইভবে হয়, স্বরধ্বনি ঘটিত পরিবর্তন ও ব্যঞ্জনধ্বনি ঘটিত পরিবর্তন।

স্বরধ্বনিঘটিত পরিবর্তন-
  • স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ- উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা ছন্দের প্রয়োজনে সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ্ণকে  ভেঙে তার মধ্যে স্বরধ্বনি আনার রীতিকে বলা হয় স্বরভক্তি বাা বিপ্রকর্ষ। যেমন - রত্ন > রতন
  • স্বরাগম- উচ্চারণ কে সহজ করতে অথবা উচ্চারণের অপারগতার জন্য শব্দের শুরুতে, মধ্যে বা শেষে স্বরধ্বনি আগমনকে বলা হয় স্বরাগম। স্বরাগমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
    1. আদি স্বরাগম- শব্দের শুরুতে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন- স্কুল > ইস্কুল
    2. মধ্য স্বরাগম- শব্দের মধ্যে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন- রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম ইত্যাদি।
    3. অন্ত স্বরাগম- শব্দের শেষে স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন- বেঞ্চ >বেঞ্চি, ইঞ্চ>ইঞ্চি ইত্যাদি।
  • স্বরলোপ- উচ্চারণের কোন ত্রুটি বা সুবিধার জন্য শব্দের অন্তর্গত কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে স্বরলোপ বলে। স্বরলোপকে ও তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
    1. আদি স্বরলোপ- শব্দের আদিতে বা শুরুতে কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে আদি স্বরলোপ। যেমন- অভ্যন্তর>ভিতর ।
    2. মধ্য স্বরলোপ-  শব্দের মধ্যে কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে মধ্য স্বরলোপ। যেমন- জানালা>জানলা, গামোছা>গামছা ইত্যাদি।
    3. অন্ত স্বরলোপ- শব্দের শেষে কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্ত স্বরলোপ। যেমন- আজি>আজ, রাত্রি>রাত ইত্যাদি।
  • স্বরসংগতি- শব্দের মধ্যে পাশাপাশি একাধিক স্বরধ্বনি থাকলে পরস্পর সঙ্গতি লাভের উদ্দেশ্যে যদি একটির প্রভাবে অন্যটি পরিবর্তিত হয়, সেই পরিবর্তনকে  স্বরসংগতি বলে। যেমন- ইচ্ছা>ইচ্ছে, মিথ্যা>মিথ্যে ইত্যাদি। স্বরসংগতিকে ও চার ভাগে ভাগ করা যায়।
    1. প্রগত স্বরসংগতি- পূর্ববর্তী স্বর এর প্রভাবে পরবর্তী স্বরের পরিবর্তনর হলে তাকে প্রগত স্বরসংগতি বলে। যেমন- ভিক্ষা>ভিক্ষে, মিথ্যা>মিথ্যে ইত্যাদি।
    2. পরাগত স্বরসংগতি- পরবর্তী স্বর এর প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরের পরিবর্তনর হলে তাকে পরাগত স্বরসংগতি বলে। যেমন- দেশী>দিশী, লিখা>লেখা ইত্যাদি।
    3. মধ্যগত স্বরসংগতি- শব্দের মধ্যে অবস্থিত স্বর যদি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী স্বর এর প্রভাবে পরিবর্তিত হয় তাহলে তাকে মধ্যগত স্বরসংগতি বলে। যেমন- বিলাতি>বিলিতি।
    4. অন্যোন স্বরসংগতি- যখন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উভয় স্বরই পরস্পরের প্রভাবে প্রভাবিত হয় তখন তাকে অন্যোন স্বরসংগতি বলে। যেমন- ধো৺কা> ধু৺কো।
  • অভিশ্রুতি- অপিনিহিতি জাতীয় শব্দ যখন ধ্বনি লোপ, স্বরসঙ্গতি প্রভৃতি ধ্বনি পরিবর্তনের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে় চলতি ভাষায় ব্যবহারের উপযোগী সংক্ষিপ্ত রূপ লাভ করে তখন তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন- রাখিয়া>রাইখা>রেখে।

ব্যঞ্জনধ্বনি ঘটিত পরিবর্তন-
  • সমীভবন- একই শব্দের মধ্যে যুক্ত ভাবে বা পাশাপাশি অবস্থিত দুটি অসম ব্যঞ্জনধ্বনি একটি অপরটির প্রভাবে সংগতি বা সাম্য লাভ করলে তাকে বলা হয় সমীভবন। যেমন- পদ্ম>পদ্দ। সমীভবন তিন রকমের হয়।
    1. পূরাগত সমীভবন- পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন ধ্বনির প্রভাবে যখন পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি সমতা পায় তখন তাকে পূরাগত সমীভবন বলে। যেমন- পদ্ম>পদ্দ।
    2. পরাগত সমীভবন-  পরবর্তী ব্যঞ্জন ধ্বনির প্রভাবে যখন পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি সমতা পায় তখন তাকে পূরাগত সমীভবন বলে। যেমন- তর্ক>তক্ক।
    3. অন্যোন্য সমীভবন- যেই সমীভবনে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী উভয় ব্যঞ্জন ধ্বনিরই পরিবর্তন হয়, তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন- অদ্য>আজ।
  • ব্যঞ্জনলোপ- উচ্চারণের কোন ত্রুটি বা সুবিধার জন্য শব্দের অন্তর্গত কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে ব্যঞ্জনলোপ বলে। স্বরলোপকে ও তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
    1. আদি ব্যঞ্জনলোপ- শব্দের আদিতে বা শুরুতে কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে আদি ব্যঞ্জনলোপ। যেমন- প্রভাত>পোভাত, প্রথম>পথম।
    2. মধ্য ব্যঞ্জনলোপ- শব্দের মধ্যে কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে মধ্য ব্যঞ্জনলোপ। যেমন- জানালা>জানলা, ফাল্গুন>ফাগুন, কার্পাস>কাপাস ইত্যাদি।
    3. অন্ত ব্যঞ্জনলোপশব্দের শেষে কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্ত ব্যঞ্জনলোপ। যেমন- গাত্র>গা।
  • হ-লোপ- শব্দ মধ্যস্থ কোন 'হ' ধ্বনি লুপ্ত হলে তাকে বলে হ-লোপ। যেমন- বাদশাহ>বাদশা।
  • সমাক্ষর লোপ- শব্দের মধ্যে পাশাপাশি দুটি দলে অবস্থিত দুটি ব্যঞ্জন ধ্বনির মধ্যে একটি লুপ্ত হলে বা শব্দের মধ্যস্থ পাশাপাশি দুটি দলের একটি লুপ্ত হলে তাকে সমাক্ষর লোপ বলে। যেমন- বড়দিদি>বড়দি, বড়দাদা>বড়দা ইত্যাদি।
  • নাশিকি ভবন- কোন শব্দ উচ্চারণের সময় তার অন্তর্গত কোন নাসিক্য ধ্বনি অবলুপ্তত হয়ে পরবর্তী ধ্বনিকে অনুনাসিক করে তোলার প্রক্রিয়াকে নাশিকি ভবন বলে। যেমন- চন্দ্র>চাঁদ, হাসি>হা৺সি ইত্যাদি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Fundamental right in Bengali | মৌলিক অধিকার

Fundamental right বা মৌলিক অধিকার ভারতীয় সংবিধানের part 3 এর article 12 থেকে article 35 এর মধ্যে আছে। মৌলিক অধিকারের ধারণা US Constitution থেকে নেওয়া হয়েছে।  ভারতীয় সংবিধানে বর্তমানে ছয়টি মৌলিক অধিকার আছে। যে গুলি হল, Right to Equality বা সাম্যের অধিকার (article 14 থেকে 18) Right to freedom বাক স্বাধীনতার অধিকার (article 19 থেকে 22) Right against exploitation বা শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (article 23 থেকে 24) Right to freedom of religion বা ধর্মীয় স্বাধীনতা (article 25 থেকে 28) Cultural and educational rights বা শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার (article 29 থেকে 30) Right to constitutional remedies বা সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার (article 32) 1978 খ্রিস্টাব্দের আগে right to property বা সম্পত্তির অধিকার ও একটি fundamental right বা মৌলিক অধিকার ছিল কিন্তু 1978 সালে 44 তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে সরিয়ে legal right বানানো হয় যা বর্তমানে article 300A যে আছে। Right to Equality বা সাম্যের অধিকার (article 14 থেকে 18) -  Article 14 -  Equal

ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজীর উত্থান

গান্ধীজীর উত্থান ব্রিটেন থেকে ওকালতি পড়ে এসে গান্ধীজী 1898 সালে সাউথ আফ্রিকাতে যান। সেখানে তিনি দাদা আব্দুল্লাহর কেসের জন্য গেলেও সেখানকার নিপীড়িত ভারতীয়দের দেখে তাদের সাহায্য করার জন্য 22 বছর সাউথ আফ্রিকা তে থাকেন। এরমধ্যে গান্ধীজীর প্রতিবাদের দুটি ধারা দেখা যায়। গান্ধীজীর প্রতিবাদের নরমপন্থী ভাগ (1894-1906) দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে গান্ধীজী প্রথমে নরমপন্থী দের মত সরকারকে প্রেয়ার এবং পিটিশন দেওয়া শুরু করে এই আশায় যে যেহেতু আফ্রিকা ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ সেই হিসাবে সেখানকার বসবাসকারী ভারতীয়রা ব্রিটেনের নাগরিক এবং ব্রিটিশ সরকার তাদের দুর্দশা দেখলে তাদের সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।  প্যাসিভ রেজিস্টেন্স বা সত্যাগ্রহী ভাগ (1906-1914) নরমপন্থী ভাবধারায় কাজ না হওয়ায় গান্ধীজি প্যাসিভ রেজিস্টেন্স এর দিকে চলে যায় যাকে তিনি সত্যাগ্রহ বলেন। তিনি প্রথম সত্যাগ্রহ করেন দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ভারতীয়দের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে। এখানে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা বলা হয়েছিল যে সমস্ত ভারতীয়রা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকে তাদেরকে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া একটি কার্ড নিয়ে ঘুরতে হব